ফলের রাজা আম। টসটসে রসে ভরা এই ফল শুধু নামেই নয়, কাজেও ‘রাজা’; মানবদেহের কোষ ধ্বংস রোধ থেকে শুরু করে হৃদরোগ, অল্প বয়সেই বুড়িয়ে যাওয়া, ক্যানসার প্রভৃতি রোধ করতেও আমের জুড়ি নেই।
—আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ লৌহ। এ কারণে গর্ভবতী নারী ও যারা রক্তাল্পতায় ভুগছেন, তাঁদের জন্য ফলটি খুবই উপকারী। তবে কত বেশি পরিমাণ খাবেন, তা জানার জন্য চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে হবে।
—জুতা পরার পর যদি পায়ে সমস্যা হয়, তাহলে ত্বকের ওই অংশে আমের ফালি ১০ মিনিট রাখুন। এরপর ধুয়ে ফেলুন। উপকার পাবেন।
—হজমের সমস্যায় ভুগলে আমই হতে পারে আপনার সবচেয়ে বড় সহায়ক। আমে রয়েছে হজমের জন্য উপকারী এনজাইম। এটি এসিডিটির পরিমাণও কমাবে।
—আম পটাশিয়াম সমৃদ্ধ। এটি উচ্চ রক্তচাপ হ্রাস করে।
—শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান? তাহলে খাদ্যতালিকায় আম রাখতে ভুলবেন না। কারণ আম খেলে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি যেমন মিলবে, তেমনি পাওয়া যাবে শর্করা।
—কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কিডনিতে পাথর জমার ঝুঁকি কমায় আম।
—আমে রয়েছে ভিটামিন ‘ই’; এটি যৌনশক্তি বৃদ্ধি করে। শরীর গঠনেও সহায়তা করে আম।
—পরীক্ষা নিয়ে ভয়? আপনার ভরসা হতে পারে আম। এর মধ্যে থাকা গ্লুটামিন এসিড মনোযোগ বাড়াতে ও স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
—চীনা চিকিত্সায় আমকে অনেক রোগ উপশমের দাওয়াই হিসেবে দেখা হয়। বলা হয়ে থাকে, রক্ত-স্বল্পতা, সর্দি, জ্বর, সামুদ্রিক ভ্রমণজনিত অসুস্থতা প্রভৃতি দূর করতে আমের জুড়ি নেই।
—যদি এসব কোনো উপকারকেই আপনি গুরুত্ব না দেন, তবু আম খাবেন। কারণ, এটি বছরের সব সময় পাওয়া যায় না।
Weather in Chittagong
সুস্থ্ থাকুন এই গরমেও ।
চৈত্রের শুরু থেকেই রাজধানীসহ সারাদেশে প্রচন্ড গরম পড়ে। এই কাঠফাটা রোদের মাঝেই জীবন ও জীবিকার তাগিদে ছুটে চলতে হয় অবিরাম। এই গরমে সুস্থ থাকতে আমাদের প্রত্যেকেই কিছুটা সচেতন হতে হবে বা সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। গরমে কীভাবে সুস্থ থাকা যায়, তা নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন।
গরমে রোগ ব্যাধি
ষড়ঋতুর এই বাংলাদেশে আমাদের কাছে প্রতিটি ঋতুর আগমনই আমাদের কাছে আনন্দদায়ক। তবে প্রতিটি ঋতুর মত গ্রীষ্মেরও ভাল ও মন্দ দিক রয়েছে। একটু সচেতন থাকলেই এর মন্দ দিক অর্থাৎ রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এই গরমে চলতে ফিরতে আমরা কমবেশি সবাই শারীরিক ও মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ি। সঠিক সময়ে সচেতন না হলে অনেক সময় তা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সাধারণত অতিরিক্ত গরমে যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারে, সেগুলোর কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আপনাদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
হিট স্ট্রোক
এই গরমে ঘামের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের প্রচুর পরিমাণ পানি বেরিয়ে যায়। ফলে লবণের ঘাটতি দেখা দেয়, যা শরীরকে করে তোলে অবসন্ন, পরিশ্রান্ত। এতে মাথাঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে পড়তে পারেন অনেকেই। তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা না করলে মৃত্যুও হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
প্রতিকার
এই গরমে যতটুকু সম্ভব রোদে কম সময় অবস্থান করতে হবে। শরীর অবসন্ন হওয়া মাত্রই ছায়াযুক্ত বা শীতল কোন স্থানে রোগীকে নিয়ে যেতে হবে। ঠান্ডা পানি ভেজানো কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে। খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে, যাতে শরীরের লবণ ও পানির শূণ্যতা দূর করতে পারে। অজ্ঞান হলে বা মাথা ঘোরালে মাথায় পানি ঢালতে হবে। যদি তাতেও অবস্থার উন্নতি না হয়, তবে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
পেটের পীড়া
গরমের সময় অত্যধিক তাপমাত্রায় খাদ্য দ্রব্য তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া গরম থেকে স্বস্তি পেতে আমরা চলার পথে অনেক কিছুই খেয়ে থাকি, যেগুলোতে হয়তো রোগজীবাণু থাকতে পারে। অন্যদিকে গরমের সময় আমাদের দেশে চরম পানি সংকট থাকায় বাসায় বা হোটেলে অনেক সময় থালা-বাসন সঠিকভাবে সাবান দিয়ে পরিস্কার করা হয় না। এসব কারণে অনেকেই এ সময় পেটের পীড়ায় ভুগে থাকেন, যাকে আমরা বলি ফুড পয়জনিং। এ থেকে বমি, ডায়রিয়াসহ অনেক রোগেই আমরা আক্রান্ত হতে পারি।
প্রতিকার
পেটের এইসব পীড়া থেকে বাঁচতে হলে আমাদের অবশ্যই বাইরের খোলা খাবার খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে। আর খেতেই যদি হয় তবে মানসম্পন্ন রেস্টুরেন্টে খাওয়া ভাল। বাসি খাবার খাওয়া যাবে না। খাবার আগে অবশ্যই ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি, শরবত, ফলের রস কিংবা ঠান্ডা পানীয় পান করতে হবে। পাতলা পায়খানা শুরু হলে খাবার স্যালাইন খেতে হবে। অবস্থা বেশি খারাপ হলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।
ত্বকের সমস্যা
গরমের সময় অনেকেরই ত্বকে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয়। ঘাম থেকে ঘামাচি হওয়া, তারপর সেই ঘামাচি চুলকাতে গিয়ে নখের আঁচড়ে ঘা তৈরি করা সাধারণ সমস্যা। আবার পানি সংকটের কারণে অনেকে গোসলের সময় সাবান কম ব্যবহার করে থাকেন, যার ফলে গোসলের পরও শরীর অপরিচ্ছন্ন থাকে। সেইসাথে রোদে পুড়ে ত্বক কালো হওয়া বা অনেকের ত্বকে ছোপ ছোপ দাগও পড়ে।
প্রতিকার ত্বকের সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে সবসময় চেষ্টা করতে হবে রোদে কম অবস্থানের। বিশেষ করে ভর দুপুরে তো নয়ই। প্রতিদিন বাইরে থেকে এসেই সাবান দিয়ে ভালভাবে গোসল করতে হবে। শরীরকে সবসময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বাইরে বের হলে ছাতা ব্যবহার করতে হবে (কালো বাদ দিয়ে)। ঘামের কাপড় বেশিক্ষণ শরীরে রাখা যাবে না। সবসময় হালকা রঙের কাপড় পরতে হবে। ভাল প্রতিষ্ঠানের সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে। চোখের প্রদাহ জনিত সমস্যা থাকলে সানগ্লাস ব্যবহার করা ভাল। আর ঘামাচি হলে ঘামাচি পাউডার লাগাতে হবে। অনেকেরই এসময় সর্দি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানির সমস্যা দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। পরিশেষে বলতে চাই এই গরমে অসুস্থ হয়ে পড়া যেমন স্বাভাবিক, তেমনি একটু সচেতন হয়ে চললেই সুস্থ থাকা সম্ভব। শুধু প্রয়োজন আপনার স্বাস্থ্য সচেতনতা। তাই সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)