টোটকা

গলায় মাছের কাটা লেগে গেলে, অর্ধেক লেবু নিয়ে রস চুষে খেয়ে ফেলুন। কাটা নরম হয়ে নেমে যাবে।
>মুখে/জিভে সাদা ঘা হলে, পানির সাথে কর্পূর গুলে মুখ দিনে ২ বার ধুয়ে নিন।
>দই খুব ভাল এন্টাসিড হিসাবে কাজ করে। এসিডিটির সমস্যা শুরু হওয়া মাত্র , কয়েক চামচ দই খেয়ে নিন।
>২ টুকরা দারুচিনি ১টি এলাচি, ২টি তেজপাতা ,২টি লবঙ্গ ও সামান্য চিনি পানিতে ফুটিয়ে ছেকে নিন। হালকা গরম অবস্থায় এই পানি খেলে কাশি ভাল হবে।
>মাথা ব্যথা হলে, কালজিরা একটা পুটলির মধ্যে বেধে শুকতে থাকুন।

অপেক্ষায় রইলাম !

একবার একলোক তার বউকে একটা SMS পাঠাল
.
.
.
কিন্তু ভুল বশত সেই sms টি চলে গেলো এক বিধবা মহিলার কাছে।সেই বিধবা মহিলার স্বামী মাত্রই গতকাল মারা গিয়েছেন।।যাই হোক, মহিলা sms টি খুললেন,পড়লেন, এবং সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন!!
কি লেখা ছিল সেই sms টি??
.
.
.
.
.
.
sms টি তে লেখা ছিলঃ












আমার প্রিয় বউ!! আমি ঠিকঠাক মতই
পৌঁছেছি!! আমি জানি তুমি আমার কাছ থেকে মেসেজ আশা করনি!! এখানে আজকাল মোবাইল ফোন এসে পড়েছে!! আমি আসার সাথে সাথে তারা আমাকে একটি মোবাইল ফোন গিফট করেছে!! সেই মোবাইল থেকেই আমি তোমাকে মেসেজ পাঠালাম!! তুমি জেনে আরো খুশি হবে যে,তারা সবাই এখানে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে!!
আশা করা যায়,কাল- পরশুর মধ্যেই তুমিও চলে আসবে!! আশা করি তোমার যাত্রাও হবে আমার মত সুখের!! তোমার অপেক্ষায় রইলাম!

ঘামাচির যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পেতে (পর্ব ৩)


বছর শুরু গ্রীষ্মকালে। গ্রীষ্মের দাবদাহে প্রচন্ড গরমে ঝরঝরে ঘাম, রাজ্যের পিপাসা, পানিশূণ্যতা, হিট স্ট্রোক, শারীরিক দুর্বলতা, ক্ষুধামন্দা, ঘামাচি, গরম থেকে ঠান্ডা লাগা, খাদ্যে বিষক্রিয়া- কত সমস্যা হতে পারে মানুষের শরীরে! একটু সতর্ক থেকে বছর শুরুর এই ঋতুতে সুস্থ থাকুন।

পান করুন পর্যাপ্ত পানি: গ্রীষ্মের গরমে ঘেমে ঘেমে কমে যায় শরীরের পানি। সেই সাথে কিছু খনিজ লবণ। পানির এ ঘাটতি পূরণ করতে পান করুন পর্যাপ্ত পানীয়। পানিশূণ্যতা প্রতিরোধের জন্যও পানি পান করা গুরুত্বপূর্ণ। দৈনিক আট গ্লাস বা তার চেয়ে বেশি পানি পান করা উচিৎ। পান করুন ততক্ষণ যতক্ষণ না তৃষ্ণা মিটে। আর তৃষ্ণা পেলেই পান করুন পানীয়। ঠান্ডা বিশুদ্ধ পানিই উৎকৃষ্ট পানীয়। ফ্রিজের অতি ঠান্ডা পানি নয়, তা গলা ব্যথার কারণ হতে পারে। গরমে শিশুরা পানিশূণ্যতায় আক্রান- হয় বড়দের চেয়ে দ্রুত। তাই শিশুরা যেন পর্যাপ্ত পানি পান করে, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। চিনির সরবত প্রয়োজন নেই মোটেও। বাইরের সরবত বা ফলের রস খাওয়ার পূর্বে এগুলোর পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে নিশ্চিত হোন। আইস ক্রীমের ঠান্ডায় গলা ব্যথা হতে পারে। জীবাণুমুক্ত না থাকলে হতে পারে জন্ডিস, আমাশয়, ডায়রিয়া, টাইফয়েড। মৌসুমী ফলও পানির চাহিদা মিটাবে। মিটাবে ক্ষুধা। শক্তিও দেবে বেশ। তাই যথেষ্টই আহার করুন তরমুজ, শশা, পেঁপে, লিচু, আম, কলা, বেল, বাঙ্গি ইত্যাদি ফল। শরীর ঠান্ডা থাকবে। তবে অনেক বেশি খেয়ে বদহজম, পেট খারাপ বা পাতলা পায়খানা যেন না হয়, সে খেয়ালও রাখুন। শরীর যখন ঘামে তখন ঘামের সাথে শরীরের লবণও বের হয়ে যায় যথেষ্ট পরিমাণে। শরীরে লবণের ঘাটতি হলে শরীর হয়ে পড়ে দুর্বল, ক্লান্ত। মাংসপেশিতে হতে পারে খিঁচুনি। লবণের এ ঘাটতিও পূরণ হওয়া চাই। ফলমূল এ ঘাটতি পূরণে অবশ্যই সহায়ক। খাবার স্যালাইনও পান করতে পারেন প্রয়োজনে।

গরম থেকে হিট স্ট্রোক:পর্যাপ্ত পানি পান না করলে বেশি গরমে শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে হতে পারে হিট স্ট্রোক। জ্বর, ঘামহীন শুষ্ক ত্বক, শ্বাস প্রশ্বাসের হার বৃদ্ধি, হৃদস্পন্দনের হার বৃদ্ধি, বমি বমি ভাব, মাথা ব্যাথা, খিঁচুনি, এমন কি অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

কাপড় চোপড় হোক আরামদায়ক: হালকা রঙের পাতলা সুতি কাপড়ের ঢিলেঢালা জামা কাপড় পরিধান করুন। কাপড়ের রং হালকা হলে তা বাইরের তাপ শোষণ করবে কম। পাতলা সুতি কাপড়ের ভেতর দিয়ে বায়ু চলাচল করতে পারবে বেশ। শরীরে গরম অনুভূত হবে কম, আরাম লাগবে বেশি।

বাইরে গেলে ভাবতে হবে: সূর্যের আলট্রাভায়োলেট রশ্মির জন্য হতে পারে ত্বকের ক্যান্সার। ক্ষতি হতে পারে চোখেরও। রোদের হাত থেকে ত্বক ও চোখ বাঁচতে মাথায় ব্যবহার করুন ছাতা বা ক্যাপ। চোখে সান গ্লাস বা রোদ চশমা। আর গায়ে আরাম দায়ক জামাকাপড় তো থাকতেই হবে।

ঘাম থেকে ঘামাচি: আমাদের ত্বকে আছে অজস্র ঘর্মগ্রন্থি। এগুলো থেকে ঘাম বের হয়। ঘামের সাথে ত্বকের ময়লা যুক্ত হয়ে এই গ্রন্থিগুলোর মুখ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ঘাম জমা হবে ভেতরে, আর গ্রন্থিগুলো ওঠবে ফুলে। হয়ে যাবে ঘামাচি। বেশি ঘামলে ঘামাচি হবার সম্ভাবনা বেশি। শিশুদের ঘর্মগ্রন্থিগুলো কম পরিপক্ক। ফলে তাদের ঘামাচি হবার সম্ভাবনা বড়দের চেয়ে বেশি। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে বা সাবান দিয়ে নিয়মিত ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে ঘামাচি হবে কম। পাতলা জামাকাপড় পরিধান করলে শরীর ঘামবে কম। তাতেও ঘামাচির আশঙ্কা কমবে।

গরমের ঠান্ডা লাগার ভয়: শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরের ভেতরের তাপমাত্রা খুব বেশি কম হলে ঠান্ডা লাগতে পারে। ঠান্ডা লাগতে পারে ঘামের শরীরে গোসল করলেও। ঠান্ডা পানিতে গোসল আরামদায়ক। তবে গোসলের পূর্বে শরীরের ঘাম শুকাতে দিন।

রোগজীবাণু বাড়ে দ্রুত: গরম আবহাওয়ায় খাবার রেখে দিলে তাতে রোগজীবাণু বংশবৃদ্ধি করে দ্রুত। সুতরাং রান্না করা খাবার খেতে হবে গরম গরম। পরে খেতে চাইলে তা রেখে দিতে হবে ফ্রিজে। অন্যথায় ফুড পয়জনিং হয়ে হতে পারে ডায়রিয়া, পেট ব্যথা, বমি।

বিশ্রাম নিন পরিমিত: ঘামে ক্লান্ত দুর্বল শরীর সকল পরিশ্রম না ও সইতে পারে। ব্যায়াম বা পরিশ্রম করুন সহনীয় পর্যায়ে। সেটাও সকালে বা বিকেলে। দুপুরের কড়া রোদে নয়। বিশ্রাম নিন পরিমিত।

ঘামাচির যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পেতে (পর্ব ২)




বাংলায় আমরা যাকে ঘামাচি বলি তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় Miliaria. এটি একটি ঘর্মগ্রন্থির রোগ। ঘর্মগ্রন্থির নালী অতিরিক্ত আর্দ্রতা ও গরমে বন্ধ হয়ে এ রোগের সৃষ্টি করে। এ রোগটি গ্রীষ্মকালে দেখা যায় এবং শীতকাল এলে আপনা আপনিই ভালো হয়ে যায়। গ্রীষ্মকালে দেহ থেকে প্রচুর পরিমাণ ঘাম নিঃসরণ হতে থাকে। ফলে তখন এত বেশি পরিমাণ নিঃসরণ কেবল ঘর্মগ্রন্থির ছিদ্রপথে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়। ফলে ওই নিঃসরণ ঘর্মগ্রন্থিকে ছিদ্র করে ত্বকের নিচে এসে জমা হতে থাকে এবং সে স্থান ফুলে ওঠে। সেই সাথে থাকে প্রচণ্ড চুলকানি ও সামান্য জ্বালাপোড়া ভাব ও ছোট ছোট উদ্ভেদ এটাই মূলত ঘামাচি। ঘামাচি তিন ধরনের হয়। যেমন মিলিয়ারিয়া কৃস্টালিনা, এ ক্ষেত্রে ঘর্মনালীর মুখের অংশটি কালো দেখা যায় এবং এ ক্ষেত্রে ত্বক দেখতে প্রায় স্বাভাবিক বলেই মনে হয়। সাধারণত এ ক্ষেত্রে কোনো উপসর্গই থাকে না। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে উজ্জ্বল পানির দানা স্বাভাবিক ত্বকের ওপর হতে দেখা যায়। দ্বিতীয়টি অর্থাৎ মিলিয়ারিয়া রুবরার ক্ষেত্রে ঘর্মনালীর রুদ্ধতা দেখা যায়। ত্বকের বহিঃত্বকের মধ্যের ঘর্মনালীতে এবং এ ক্ষেত্রে ত্বকের ওপর ছোট ছোট অসংখ্য গোটা দেখা যায়। যে গোটার মাথায় পানির দানা থাকতেও পারে, আবার নাও থাকতে পারে, যা লালচে ত্বকের ওপর হতে দেখা যাবে এবং সেই সাথে থাকবে প্রচণ্ড চুলকানি, যা মূলত শরীরের মূল অংশ ও ঘাড়ে বেশি হতে দেখা যায়।



তৃতীয়টি অর্থাৎ Miliaria Profounda-এর ক্ষেত্রে ঘর্মনালীর ইসলসধর বা বদ্ধতা মূলত ত্বকের বহিঃত্বক ও অন্তঃত্বকের মিলনস্থানে দেখা দেয় অর্থাৎ ত্বকের অনেক গভীরে। কাজেই ত্বক দেখতে অনেকটা স্বাভাবিক ধরনের মনে হয় এবং এ ক্ষেত্রে এই দানা বা গোটা মূলত দেহের মূল অংশে (Trunk) এবং হাতে ও পায়ে হতে দেখা যায়। এই তিন ধরনের মধ্যে Miliaria Rubra সবচেয়ে বেশি হয়। এই রোগটি গরমকালে হয় বলে তাকে Heat Rash বলা হয়ে থাকে। গরম ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় এ রোগ বেশি হয় এবং গরমকালে যারা গায়ে তেল মাখেন, তাদের এ রোগ বেশি হয়। এ রোগ নির্ণয়ের জন্য সাধারণত কোনো পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না। চোখে দেখে চিকিৎসকরা এ রোগ নির্ণয় করে থাকেন। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে Folliculitits কিংবা ত্বকের CANDIDIASIS অথবা Contract Dematititis-এর মতো দেখতে মনে হয় বলে চিকিৎসকরা Confusion-এ ভুগে থাকেন।



চিকিৎসাঃ মূল চিকিৎসা হলো গরম আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটিয়ে ঠাণ্ডা পরিবেশে যেতে হবে। আর যদি Air Cooler-এর ব্যবস্থা সম্ভব না হয় তাহলে সার্বক্ষণিক ফ্যানের নিচে থাকতে হবে; যেন ত্বকের সংস্পর্শে বাতাস খেলতে পারে। এ ছাড়া হাইড্রোকটির্সোন ১ শতাংশ ব্যবহার করলে ত্বকের চুলকানি কমে যায়। এ ছাড়া Anthical Lotion অথবা Calamine Lotion লাগিয়ে ভালো ফল পাওয়া যায় এবং এর সাথে AntihistaminI ব্যবহার করা যায়।

অতিরিক্ত ঘামঃ হাত ও পায়ের তালুসহ শরীর থেকে অল্প পরিমাণ ঘাম হওয়া একটি স্বাভাবিক দৈহিক ক্রিয়া। কিন্তু সে যদি অধিক পরিমাণে হয় বা তা থেকে যদি দুর্গন্ধ নির্গত হয়, তবে তাকে বলা হয় Hyperhidrosis. এটা Localized বা Generalilzed অর্থাৎ সর্ব শরীরব্যাপীও হতে পারে। লক্ষ্য করলে দেখবেন অনেকেরই শুধু হাত কিংবা হাত ও পা একত্রে অধিক পরিমাণে ঘামে এবং কখনো কখনো দুর্গন্ধও হয়। এই রোগ শোক-দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও আবেগতাড়িত ব্যক্তিদেরই বেশি হয়। এ ছাড়া Spicy Food টমেটো, সচ, চকোলেট, চা-কফি ও গরম স্যুপ খেলে অতিরিক্ত ঘর্ম হতে পারে। এ ক্ষেত্রে কপালে, ওপরের ঠোঁটে, ঠোঁটের আশপাশে এমনকি বুকের মধ্যখানে অধিক মাত্রার ঘাম শুরু হতে দেখা যায়। খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই এই ধরনের অতিরিক্ত ঘর্ম হওয়াকে বলা হয় Dustarory Hyper hydrosis.

চিকিৎসাঃ ২০ শতাংশ অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড টিংচার সপ্তাহে তিনবার প্লাস্টিক গ্লোবসের মাধ্যমে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এ ছাড়া ঘুম ও দুশ্চিন্তানাশক ওষুধের সাথে Probanthine ব্যবহারেও ভালো ফল পাওয়া যায়।

ঘর্মরোধ (Anhyrosis)ঃ ঘাম না হওয়াকেই ঘর্মরোধ বলা হয়। বিভিন্ন কারণে এই রোগ হতে পারে। যেমন জন্মগতভাবে যদি ঘর্মগ্রন্থি অনুপস্থিত থাকে কিংবা স্নায়ুতন্ত্র আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে অনুভূতি ক্ষমতা কমে যায়। অথবা কোনো বিষাক্ত ওষুধ ব্যবহারে ঘর্মগ্রন্থি ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে, লোমকুপের মধ্যে অধিক পরিমাণে ময়লা জমলে এই অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে Diprovate-MF মলম ব্যবহারের পাশাপাশি Tab Betnelan 0.5mg একটি করে দিনে তিনবার দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যায়।

ঘামাচির যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পেতে (পর্ব ১)

ছোটখাট কিছু অসুখ আছে যাতে ভুগেনি এমন মানুষ নেই । অথচ এ সব রোগকে অনেকেই অবজ্ঞা করেন বা এগুলোকে রোগ হিসেবে গ্রহণ করতে চান না । অথচ এসব অতিশয় সাধারণ রোগও অনেক সময় বেশ ক্ষতি করতে পারে। এ ধরণের একটি রোগ হলো ঘামাচি ।
পাঠক আজকে আমরা এই ঘামাচি রোগ নিয়ে আলোচনা করব। ঘামাচি নিয়ে আমরা কথা বলেছিলাম ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের প্রধান এসোসিয়েট প্রফেসর ডা. শাহাবউদ্দিন আহমদ চৌধুরীর সাথে । ঘামাচি আমাদের একটি অতি পরিচিত নাম। তবে একে চর্ম রোগ হিসেবে গ্রহণ করতে আমাদের মধ্যে অনেকেই রাজী হয়ত হবেন না । কিন্তু সত্যি বলতে কি ঘামাচিও একটি চর্ম রোগ। বাংলায় আমরা যাকে ঘামাচি বলি তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় তাকে বলা হয় মিলিরিয়া (Miliaria)। মিলিরিয়া বা ঘামাচি আমাদের দেহের ঘর্মগ্রন্থির রোগ।
আমাদের দেহে যে ঘর্ম-নালী আছে তা অতিরিক্ত আর্দ্রতা ও গরমে বন্ধ হয়ে এ রোগের সৃষ্টি করে। ঘামাচি গ্রীষ্মকালে দেখা যায় এবং আবহাওয়া ঠান্ডা হতে থাকলে বা শীতকালে তা আপনা আপনিই ভালো হয়ে যায়। গ্রীষ্মকালে দেহ থেকে প্রচুর পরিমাণ ঘাম নিঃসরণ হতে থাকে ফলে ওই নিঃসরণ ঘর্মগ্রন্থিকে ফুটো করে ত্বকের নিচে জমা হতে থাকে এবং সে স্থান ফুলে ওঠে । সেই সাথে থাকে প্রচণ্ড চুলকানি ও সামান্য জ্বালাপোড়া ভাব ও খুব ছোট ছোট দানার মতো দেখতে পাই আর এটাই হলো ঘামাচি । আমাদের দেহে যে সব ঘামাচি হয় তার সবই এক ধরনের নয় বলে জানিয়েছেন প্রফেসর শাহাবউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী । তিনি আমাদের জানালেন, সাধারণ ভাবে আমাদের দেহে যে সব ঘামাচি হয় তা তিন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন মিলিয়ারিয়া কৃস্টালিনা। এই ক্ষেত্রে ঘর্মনালীর মুখের অংশটি কালো দেখা যায় এবং ত্বক দেখতে প্রায় স্বাভাবিক বলেই মনে হয়। সাধারণত এ ক্ষেত্রে কোনো উপসর্গই থাকে না। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে উজ্জ্বল পানির দানা ত্বকের ওপর হয়েছে বলে দেখা যায়। হালকা ভাবে ঘষা দিলেই এই ঘামাচি মিলিয়ে যায় । এই জাতীয় ঘামাচিতে চুলকানি প্রায় থাকেই না।
দ্বিতীয় প্রকারের ঘামাচিকে বলা হয় মিলিয়ারিয়া রুবরা,এ ক্ষেত্রে ত্বকের উপরে ছোট ছোট অসংখ্য গোটা দেখা যায়। সে গোটার মাথায় পানির দানা থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে, তবে ত্বক রং লালচে হয়ে যায়। একই সাথে ত্বকে থাকবে প্রচণ্ড চুলকানি ।এই ঘামাচি আক্রান্ত কারো কারো মনে হয় দেহে পিন ফুটানো হচ্ছে। সাধারণ ভাবে ঘামাচি বলতে আমরা এই ধরণের ঘামাচিকে বুঝে থাকি। এই ঘামাচি মূলত শরীরের মূল অংশ ও ঘাড়ে বেশি হতে দেখা যায়। এই ঘামাচি ফুসকুড়ি আকার ধারণ করলে বা পেকে গেলে তাকে বলা হয় মিলিয়ারিয়া পাসটুলোসা(Miliria Pastulosa)। আরেক ধরণের ঘামাচিকে মিলিরিয়া প্রোফাউন্ডা( Miliaria Profounda) বলা হয়। এ ক্ষেত্রে ঘর্মনালী Blook বা বদ্ধ হয়ে ত্বকের বহিঃত্বক ও অন্তঃত্বকের মিলনস্থানে দেখা এ সব ঘামাচি দেখা দেয়। হঠাৎ করে গরম দেখা দিলে বা গরমস্থানে থাকলে এই ঘামাচি দেখা দেয়। কিন্তু গরম স্থান থেকে সরে আসলে ঘন্টা খানেকের মধ্যে এসব ঘামাচি মিলিয়ে যায়।
তবে সাধারণ ভাবে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় যে ঘামাচি তা হলো মিলিরিয়া রুবরা। এই রোগীটি গরমকালে হয় বলে অনেকে একে Heat Rash বলে থাকেন। গরম ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় ঘামাচির প্রকোপ সবচেয়ে বেশি হয় এবং গরমকালে যারা গায়ে তেল মাখেন তাদের এ রোগ বেশি হয়। ঘামাচি নির্ণয়ের জন্য সাধারণত কোনো পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না। খালি চোখে দেখে চিকিৎসকরা এ রোগ নির্ণয় করে থাকেন। ঘামাচি থেকে যে সব জটিলতা দেখা দিতে পারে তার মধ্যে রয়েছে ঘাম বের হওয়ার গ্রস্থি বন্ধ হয়ে দেহের ঘাম বের হওয়ার পথে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা। আর এরফলে দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যেতে পারে দেখা দিতে পারে ঘামাচি। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কর্ম ক্ষমতা লোপ পেতে থাকবে। খাবারে অরুচি দেখা দেবে এবং সর্বক্ষণ দেহে একটা ক্লান্তিকর অনুভূতি থাকবে। পরিস্থিতি আরো মারাত্মক হলে রোগী একেবারে কাজ কর্ম করতে পারবে না। তবে এই চরম অবস্থাটা খুবই কম হয়। অর্থাৎ ঘামাচি সাধারণ রোগ হলেও তা নিয়ে মোটেও হেলাফেলা করা ঠিক হবে না।
সাধারণ ভাবে গরম এবং আর্দ্রতার কারণে ঘামাচি হয় বলে এই রোগের চিকিৎসা করতে গেলে রোগীকে প্রথমেই এ জাতীয় বৈরী পরিবেশ থেকে সরিয়ে নিতে হবে। তাকে তুলনামুলক ভাবে ঠান্ডা ও শীতল স্থানে রাখতে হবে। প্রফেসর ডা. শাহাবউদ্দিন আহমদ চৌধুরী আমাদের আরো জানালেন, ঘামাচির রোগীকে যদি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে ১২ থেকে ২৪ ঘন্টা রাখা হয় তবে তা দেহের ঘামাচি একবারে দূর হয়ে যায়। তিনি ঘামাচি আক্রান্ত রোগীর ঘর্ম গ্রন্থির মুখ খুলে দেয়ার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিশেষ জাতের মলম ব্যবহার করার কথা বলেছেন। এ ছাড়া চুলকানি কমানোর জন্য এন্টি হিস্টামিন ও ঘামাচির কারণে দেহের কোথাও কোনো ঘা হলে তার সারানোর জন্য এন্টি বায়োটিক দেয়া হয় ।

সুস্থ জীবন কাটাতে চান ? নাকডাকা আগে সারান

নাসিকা গর্জন৷ যাকে নিয়ে আমরা হাসিঠাট্টা করে থাকি৷ সেই নাকডাকা ব্যাপারটা যে কত ভয়ংকর হতে পারে, তাই জানালেন জার্মানির গবেষকরা৷ সুস্থ জীবন যাপনের জন্য আগে এটাকে বন্ধ করা প্রয়োজন৷
রোজ কত কী ঘটে যাহা তাহা.. / এমন কেন সত্যি হয়না আহা! রবি ঠাকুরের এই কবিতাটি অবশ্যি অন্য কারণে লেখা হয়েছিল৷ কিন্তু এই যে মানুষের বদভ্যাস৷ উদাহরণ, নাক ডাকা, নিঃশ্বাসের শব্দ, শরীর থেকে তৈরি হওয়া আরও কিছু শব্দটব্দ, এসব যদি না থাকত? তাহলে জীবনটা আরও নিরাপদ হত না কী! কিন্তু সেটা সত্যি হয়না৷ আর সেসব ভুলভাল কারণেই প্রতি বছর প্রচুর যুগল, অসংখ্য দম্পতি হারিয়ে ফেলে ভালোবাসা৷ চলে যায় বিচ্ছেদের পথে৷ দেখা দেয় হাজারো দুঃখ বিষাদ, এই জীবনে৷

তারপরেও বিজ্ঞান বলছে, ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা মানেই অসুস্থতা, তা কিন্তু নয়৷ বার্লিনের শারিটে ইউনিভার্সিটির স্লিপ মেডিসিন বিভাগের প্রধান গবেষক আলেক্জান্ডার ব্লাউ বেশ দীর্ঘ গবেষণার পর একথা জানিয়েছেন৷ তাঁর বক্তব্য, অনেক ক্ষেত্রেই নাকডাকা কোন একটা অসুস্থতার লক্ষণ৷ কিন্তু সব ক্ষেত্রে সেটা বাস্ততবসম্মত নয়৷

কিন্তু ঘুমের মধ্যে কেন ডাকে আমাদের নাক? নাক কান ও গলার সমস্যা নিয়ে জার্মান গবেষণাকেন্দ্র ডিজিএসএম- এর তরফে ইয়ান লোয়লার বলছেন, নাকের হাড়ের গঠনে বিচ্যুতি থেকে ঘুমোতে যাওয়ার আগে মদ্যপান, নাক ডাকার কারণ এক নয়, বহু৷ সেগুলোর ব্যাখ্যা দিয়ে তাঁর মন্তব্য, যে সমস্ত ব্যক্তির নাক ডাকে বিস্তর পরিমাণে, তাঁদের কিন্তু সতর্ক হওয়া দরকার৷ কারণ, এই নাক ডাকা এমনকি বড়মাপের অসুস্থতাও ডেকে আনতে পারে!
কীভাবে, নাক ডাকা থেকে অসুস্থতা? ডিজিএসএম- এর গবেষণা বলছে, যে সব মানুষ ঘুমের মধ্যে বিস্তর পরিমাণে নাক ডাকায় ভোগেন, তাঁদের চিকিৎসায় পরিভাষায় বলা হয়, ম্যালিগন্যান্ট স্নোরিং৷ আরও বিশদে বললে অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ আপনিয়া (Obstructive Sleep Apnea) বা সংক্ষেপে ওএসএ৷ এই ওএসএ-র শিকার যাঁরা, তাঁদের অনেকেই ভোগেন হৃদযন্ত্রের সমস্যায়৷ এঁদের মধ্যে কারও যদি থাকে উচ্চ রক্তচাপ কিংবা ডায়াবেটিসের মত রোগ, তাহলে সমস্যা আরও বেড়ে যায়৷ সেক্ষেত্রে ঘুমের মধ্যে নাক ডাকতে ডাকতে অনেক সময় ত্রিশ সেকেন্ড পর্যন্ত কোন অক্সিজেন শরীরে পৌঁছয় না সেই ব্যক্তির৷ রক্তে কার্বনের পরিমাণ বাড়তে থাকে৷ সেটা তো মস্ত এক জটিলতা৷

এ বিষয়েই সতর্কতা শুনিয়েছে ডিজিএসএম৷ তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা এ ধরণের ওএসএ- তে ভুগছেন, সচরাচর সারারাত নাক ডেকে ঘুমিয়েও পরের দিনটা তাঁরা অবসন্ন বোধ করেন, ঝিমুনি আসে, কাজে ছন্দ পান না৷ তার কারণটাও ওই রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়৷ এক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটা তাঁদের জন্য জরুরি৷ ডিজিএসএম- এর সেটাই পরামর্শ৷

দেখা গেছে, শিল্পোন্নত দেশগুলিতে শতকরা ৫০ জন পুরুষ আর ৩০ জন মহিলা নিয়মিত নাক ডাকেন ঘুমের সময়ে৷ তাঁদের মধ্যে জটিল নিঃশ্বাসের সমস্যায় ভোগেন ২০ শতাংশ পুরুষ আর ১০ শতাংশ মহিলা৷ এই সমস্যা দূর করার উপায়ও বাতলেছে ডিজিএসএম৷ বলেছে, প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমোতে যাওয়াটা জরুরি৷ ঘুমের আগে কোন অবস্থাতেই অ্যালকোহল পান না করা দরকার এবং সেইসঙ্গে চিকিৎসা তো বটেই!

নাসিকা গর্জন নিয়ে অনেক হাসিঠাট্টা করে থাকি আমরা৷ কিন্তু, সে যে এমন সমস্যার খনি, তা কে-ই বা জানত? সুতরাং, আর হাসাহাসি নয়, এবার বরং প্রয়োজন এই নাকডাকা নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো৷ কেউ নাক ডাকে, এটা স্রেফ মজার বিষয় নয়৷ এর থেকে অনেক রোগেরও সৃষ্টি হতে পারে৷ তাই ভালো করে ঘুমোতে চান, সুস্থ হয়ে বাঁচতে চান, তো নাকডাকা আগে কমান৷ এমন একটা ধুয়ো তুলে দেওয়াটা মনে হয় সবার আগে দরকার৷